চৈতী হাওয়া (পর্ব ৪) - লিখেছেন - আবীর হাসাম সায়েম
নবনীর বেশ বিরক্ত লাগছে। তিশা আর ওর বান্ধুবিরা শুধুই চেচামেচি করছে।
তিশা বলছে,
"আপুকে লাল লিপ্সটিকে বেশি মানাবে।"
তিশার বান্ধুবী জুই বলছে,
"না গোলাপি লিপ্সটিক দে। শাড়ির সাথে মিলবে।"
নবনীর ইচ্ছে করল রাফাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করতে কোনটা দিলে ভালো হবে। কিন্তু মা যদি দেখে রাফা আমার রুমে ঢুকেছে তাহলে বড্ড ঝামেলা করবে। মা যে কেনো হঠাৎ রাফাকে সহ্য করতে পারছে না তা নবনী খুজে পায় না। বাইরে অনেক শব্দ শুনা যাচ্ছে। শব্দে নবনীর মাথা ধরে গেছে। কিছুদিন হল, সে বেশি শব্দ সহ্য করতে পারে না। মাথা ধরে যায়।
হয়তো মা'র কাছে রাফাকেও ওইরকম শব্দ মনে হয়। তাই হয়ত তাকে সহ্য করতে পারে না।
তিশা আর ওর বান্ধুবীর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তারা ভেবেছিলো দুলা ভাই এলে, তারা গিয়ে গেট ধরবে। কিন্তু রাবেয়া খতুন মানা করে দিয়েছেন।
"এইসব কাজ করা লাগবে না। ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেলেই হয়। খবরদার তোরা গেট ধরে ঝামেলা করতে যাবি না।"
পাত্রপক্ষের গাড়ি বাড়ির সামনে এসে থেমেছে। অনেক মানুষ, ব্যান্ড পার্টির আওয়াজ কিন্তু রাফা লক্ষ্য করলো তিশা আর তার বান্ধুবী এখানে নেই। কী সর্বনাশ, ওরা না এলে গেট ধরবে কে?
রাফা দৌড়ে ২ তালায় নবনীর ঘরের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিলো। তিশা এসে দরজা খুলে দিলো, সে মুখ ভোতা করে রেখেছে। রাফা রুমের ভিতরে ঢুকল। নবনী ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় রাফাকে দেখলো। নবনীকে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। বিয়ের সময় আর মৃত্যুর সময় মানুষের রুপ কয়েকগুন বেড়ে যায়। রাফা তিশাকে বলল,
"এই তোরা এখনো এখানে কেনো? তোরা না থাকলে গেট ধরবে কে?"
তিশা বিষন্ন গলায় বলল,
"মা মানা করেছে। "
রাফা বলল,
"আমি খালাকে বলবো। আয় আমার সাথে তোরা"
"কিন্তু আপুর লিপ্সটিকটা এখনো দেয়া হয় নি।"
রাফা নবনীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
"তুই লিপ্সটিকটা নিজে দিয়ে নিতে পারবি না?
নবনী বলল,
"হ্যা, পারবো। কিন্তু কোনটা দিবো?লালটা নাকি গোলাপিটা?"
রাফা বের হয়ে যেতে হাসি মুখে বলল,
" একটা কাজ কর উপরের ঠোঁটে লাল লিপ্সটিক দে,আর নীচেরটাতে গোলাপি। "
এই কথা বলেই রাফা তিশা আর জুইকে নিয়ে নিচে নেমে গেলো। নবনীর হবু বর দরজার ভিতরে ঢুকতে যাচ্ছিল এমন সময় রাফা এসে বলল,
"আরে দুলাভাই। কোথায় যাচ্ছেন? এতো সহজে তো ঢুকতে দেওয়া যায় না। গুরূদক্ষিণা লাগবে তো।"
রাবেয়া বেগম কঠিন গলায় বলল,
"এইসবের দরকার কি? শুধুই ঝামেলা"
রাফা কিছু বলবে,এর আগেই লতিফ সাহেব বলে উঠল,
"আরে ওরা দুলাভাইয়ের সাথে একটু দুষ্টামি-ফাইজলামি করবে না তো কে করবে?"
রাবেয়া খাতুন আর কোনো কথা বললেনা, শুধু শক্ত চোখে লতিফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মনে মনে হয়তো আবার বললেন, "গ্রেডুয়াটেড স্টুপিড।"