আমেরিকা কিভাবে পরাশক্তি হয়ে উঠলো? | নিবির ভূঁঞা
সালটি ছিলো ১৪৯২। ইতালিয়ান এক্সপ্লোরার ক্রিস্টোফার কলম্বাস উত্তর আমেরিকার কাছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করার মাধ্যমেই ইউরোপিয়ানরা আমেরিকা সম্পর্কে জানতে পারে।
১৬০০ সালের দিকে ব্রিটেন আমেরিকাতে তাদের কলোনি স্থাপন করে। এর পর ফ্রান্স ও স্পেন একই পথে হাঁটে। ১৭৭৬ সাল পর্যন্ত উত্তর আমেরিকা ব্রিটেন, স্পেন ও ফ্রান্সের উপনিবেশ হিসেবে ছিলো।
দীর্ঘসময় উপনিবেশিক শাসন চলতে থাকে উত্তর আমেরিকায়। এতে উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ জন্মায়। তারই ফলশ্রুতিতে আমেরিকার বিপ্লোবীরা চৌঠা জুলাই ১৭৭৬ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষনা করে। এতে জন্ম হয় স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক আমেরিকার। কিন্তু তখনো আমেরিকা তথা যুক্তরাষ্ট্রের পরাশক্তি হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা ছিলো না।
বলছি ১৮৫০ সালের পরবর্তী সময়ের কথা যখন একের একের পর টেরোরিটি ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং স্পেন ওকুপাইড করছিলো। হঠাৎ প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হয়ে আমেরিকার আবির্ভাব হয় ডেমোক্রেটিক দেশ হিসেবে। তখন আমেরিকার পার্শ্ববর্তী যেই দেশ বা রাষ্ট্রগুলো ছিলো তারা ভাবতে শুরু করে যে তারা কি ফ্রান্স, ব্রিটেন, স্পেনের হাতে উপনিবেশ হিসেবে থাকবে নাকি আমেরিকাতে যোগ দিয়ে এক গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকবে! এতে বেশিরভাগ টেরোরিটি বা অঞ্চল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবধিকারের কথা চিন্তা করে আমেরিকাতে যোগ দেয়। ওহাইও, ফ্লোরিডা আমেরিকাতে যোগ দেয়ার পর একেকপর এক টেরোরিটি ও রাষ্ট্র আমেরিকাতে যোগ দিতে থাকে। এতেই সুবিশাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবির্ভাব হয়। যুক্তরাষ্ট্র ভাবতে থাকে আমরা আমাদের দেশ যত বড় করতে পারবো তত আমাদের ইকোনোমি এবং জিডিপি বাড়বে। উনিশ শতকের পর আমেরিকা এক বিশাল টেরোরিটিতে পরিনত হয়। এতেই আমেরিকা দমে যায়নি। আমেরিকা ১৮৬৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে ৭.২ মিলিয়ন ডলারে আলাস্কা কিনে নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় অর্থের দাপটে ১৮৯৮ সালে আমেরিকা ফিলিপিন্সকে ২০ মিলিয়ন ডলারে নিজেদের করে নেয়। কিন্তু বেশিদিন ফিলিপিন্সকে নিজেদের করে রাখতে পারেনি আমেরিকা। ১৯৪৬ সালে ফিলিপিন্স আমেরিকা থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯০০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। আমরা সবাই জানি বিশ্বযুদ্ধ দুটি ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপে সংঘটিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রও এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহন করে। যুদ্ধে অসংখ্য মার্কিন সৈন্যের মৃত্যু হয়।
যেহেতু বিশ্বযুদ্ধ আমেরিকা থেকে বহু দূরে সংঘটিত হয় তাই এতে আমেরিকার অর্থনীতিতে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি বরং আমেরিকা এই বিশ্বযুদ্ধ দুটি থেকে অস্ত্র বিক্রি করে বিপুল পরিমানে অর্থ আয় করে।
বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইউরোপের দেশগুলো বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ে এবং তাদের কারেন্সি কলাপ্স করে। পক্ষান্তরে মার্কিন ডলার ছিলো স্ট্যাবল। তাই ইউরোপের বেশিরভাগ লোক মার্কিন ডলার ক্রয় করতে থাকে। এতে মার্কিন ডলারের দাম ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের দিকে মিত্র শক্তির চুয়াল্লিশটি দেশ সিদ্ধান্ত নেয় যে তাদের নিজস্ব কারেন্সিকে স্ট্যাবল রাখতে মার্কিন ডলারের সাথে লিংকড করে দেয় এবং মার্কিন ডলার, গোল্ডের সাথে লিংকড করে দেয়। মিত্র শক্তি বিশ্বযুদ্ধ জেতার ফলে মার্কিন ডলার আন্তর্জাতিক কারেন্সিতে পরিনত হয়। এতে আমেরিকার অর্থনীতি বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিতে পরিনত হয়।
১৯৫০ সালের দিকে বিশ্বে দুটি পরাশক্তির আবির্ভাব হয়। যথাক্রমে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। ঐ সময়ে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। মূলত স্নায়যুদ্ধটি ছিলো আইডিয়োলজি নিয়ে। ক্যাপিটালিজম এবং কমিউনিজম নিয়ে। আমেরিকা ছিলো ক্যাপিটালিজমে বিশ্বাসী। পক্ষান্তরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিলো কমিউনিজমে বিশাসী। এতে পুরো বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশ দুটো আইডিওলজিতে বিভক্ত হয়।
আমেরিকা বিভিন্ন দেশে সোভিয়েত ইউনিয়নপন্থি সরকার হটানোর জন্য ফান্ডিং করতে থাকে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকার হটিয়ে নিজেদের পাপেট সরকার বসিয়ে নিজেদের আদিপত্য বিস্তার করতে থাকে। এতে ঐ সকল দেশ আমেরিকার উপর সরাসরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যার ফলে আমেরিকা আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়। স্নায়ুযুদ্ধের ফলে আমেরিকা ৮০০ এর অধিক মিলিটারি ক্যাম্প ৭০টি আলাদা আলাদা দেশে স্থাপন করে। এতে আমেরিকার অনেক অর্থ ব্যয় হয় সামরিক খাতে। ফলশ্রুতিতে আমেরিকা বিশ্বের শীর্ষ সামরিক শক্তিতে পরিনত হয়।
স্নায়ুযুদ্ধের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকা উভয়ই পরাশক্তিতে পরিনত হয়। এভাবে দুই পরাশক্তির দৌরাত্ম্য চলতে থাকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ২৬শে ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ায় পৃথিবীতে একক পরাশক্তিতে পরিনত হয় আমেরিকা। এভাবেই এখন আমেরিকা হয়ে উঠেছে এক আনবিটেন কান্ট্রি!