ময়মনসিংহ রাজপরিবারের ইতিহাস (২য় পর্ব) - লিখেছেন - আবিদ আল মুদাব্বির
মুক্তাগাছার জমিদারি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ জমিদারী। তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অর্ধেক অংশের মালিকানা ছিল এই রাজবংশের। মুক্তাগাছা জমিদারীর সীমানা দেওয়ানগঞ্জ হতে শুরু করে কিশোরগঞ্জের ভৈরব এবং মেঘালয়ের সীমান্ত হতে শুরু করে ভালুকার ভাওয়াল পরগণা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
এই সম্পুর্ন জমিদারী ছিল শ্রীকৃষ্ণ আচার্যের চার সন্তানের অধীনে।
মুক্তাগাছার জমিদারী হলো ১৬ হিস্যার জমিদারী।
যেমন- বড়হিস্যা, মধ্যমহিস্যা, ছোটহিস্যা, আটানী বাজার, দরিচারআনী বাজার উল্লেখযোগ্য। যা চারভাই মিলে ভাগাভাগি করে নেন।
হিস্যা বলতে বুঝায় যে কোনো সম্পত্তির যে কয়জন মালিক আছেন তাদের প্রত্যেকের ঐ সম্পত্তির মোট যে পরিমাণ জমি আছে তার কতটুকু জমির মালিক। তৎকালীন বৃহত্তর ময়য়মনসিং জেলার (১৬ আনা) মধ্যে অর্ধেক অংশ ( ০৮ আনা) এর মালিকানা ছিল মুক্তাগাছার মহারাজাদের।
এই কারণে মুক্তাগাছা রাজবাড়িকে "আটানি জমিদার বাড়ী" বলা হয়। এই জমিদারীর এস্টেটের জমিদাররা কোন সময় রাজা, মহারাজা, রায়বাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন।
সবার ছোট ছেলে শিবরাম আচার্যের থেকে শুরু করা যাক।
চতুর্থপুত্র শিবরাম আচার্যের বসবাসরত অংশে বর্তমানে শহিদ স্মৃতি কলেজের অবস্থান! শিবরাম আচার্য এর ছেলে রঘুনন্দন আচার্য যার স্ত্রী ছিলেন মহারানী বিমলা দেবী।
১৭৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্থাপন করা হয়। মি: রিটন নতুন জেলার প্রথম কালেক্টর নিযুক্ত হয়। কিন্তু তখন কালেকটরের অফিসাদির জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান ছিল না। রঘুনন্দন আচার্য চৌধুরী ১৭৯১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারকে মোমেনশাহী পরগণার (ময়মনসিংহ সদর এবং উত্তর ও দক্ষিণের সকল থানা সমূহ) হতে জমি দান করেন এবং উক্ত জমিতে "নাছিরাবাদ নগর" স্থাপিত হয় এবং তার বংশধরেরাই নগরের অধিকারী হয়েছিলেন।
রঘুনন্দনের কোনো সন্তান না থাকায় দত্তক নেন "গৌরিকান্ত"কে এবং রঘুনন্দন মৃত্যু বন্ধন করে। কিন্তু কিছুদিনের মাথায় গৌরিকান্তও মারা যায়!
এরপর রাজ্যভার নেয় মহারানী বিমলা দেবী!
অন্ন দান দর্শনে মুগ্ধ হয়ে কাশীর জনতা তাকে "রানী বিমলাদেবী অন্নপুর্না" বলে ডাকত! এখনো সেখানে তার বাড়ি আছে!
বিমলাদেবী আরেকজন কাশিকান্তকে দত্তকপুত্র নেয়। ১৮২০ সালে মুক্তাগাছায় নিজ নামে বিমলেশ্বর শিব স্থাপন করেন।
কাশিকান্ত ছিল বিমলাদেবীর উত্তরাধীকারী। তিনি দৃঢ় চিত্ত এবং ভোগবিলাসী লোক ছিল। কাজ সুচারুরুপে সম্পন্ন করতে অকাতর অর্থব্যয় করতেন। তিনি শিবরামের প্রাপ্ত জমিদারীর ২য় পুরুষ। কাশীকান্ত মহাশয় একটি প্রিয়দর্শন হাতি ছিল যার দন্ত দুইটি খুবই সুন্দর ছিলো।
মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর তা জানতে পেরে হাতিটির বিনিময়ে "রাজা" উপাধি দিতে চান। কিন্তু তিনি হাতিটিকে এত ভালোবাসতেন যে তা প্রত্যাখ্যান করলেন।
রোগযন্ত্রণায় তিনি সবসময় অস্থির থাকতেন ১৮৪৯ সালে কাশি যাবার পথে নৌযানরত মৃতুবরণ করে
কাশীকান্তের কোন সন্তান ছিল না। তাই রাজ্যভার পায় তার স্ত্রী লক্ষীদেবী। প্রজারা সেসময় খুবই সুখ ও শান্তিতে ছিল।
লক্ষীদেবীর ১৮৫১ সালে দত্তক নেন চন্দ্রকান্তকে।
উল্লেখ্য যে, ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহে লক্ষিদেবী ময়মনসিংহ এর কালেক্টর এ ডি এইচ স্কেল সাহেব কে আশ্রয় দেন।
১৮৫৮ সালে চন্দ্রকান্ত মৃত্যুবরন করে। এরপর লক্ষীদেবী দত্তক নিলেন "পূর্নচন্দ্র"কে যার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "সূর্যকান্ত"।
লক্ষীদেবীর আমলে প্রজারা সকল প্রচুর শান্তিতে ছিলেন।
১৮৬৩ সালে তিনি মৃত্যুবরন করে।
চলবে…
আগামী পর্বে আসবে ময়মনসিংহ রাজপরিবারের সব থেকে জনপ্রিয়, দোর্দন্ড প্রতাপের অধিকারী, নিয়তির সন্তান যিনি আপন প্রচেস্টায় নিজের ভাগ্য গড়তে সচেষ্ট ছিলেন "মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য রায়চৌধুরীর (১৮৫১, ৩১ আগস্ট - ১৯০৮, ২০ অক্টোবর) ইতিহাস।
+লেখক: আবিদ আল মুদাব্বির।
সরকারী বিজ্ঞান কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র। ইতিহাসের পাতায় ডুবে থাকতে ভালবাসেন। লোকের বিশ্বাস বর্তমানে বাঁচো এবং ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করো। কিন্তু লেখক বিশ্বাস করেন, অতীত ইতিহাসের পাতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে চলায়!
ফেসবুক:আইডি লিংক