জোয়ান বায়েজঃ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভীনদেশী এক সাহসী যোদ্ধা !! - লিখেছেন - মোঃ মোস্তফা জামান
জোয়ান বায়েজ ১৯৪১ সালে নিউইয়র্কের স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন মার্কিন ফোক গায়িকা ও সমাজকর্মী। তিনি বোস্টন এবং কেমব্রিজের কফিহাউজগুলোতে গান গেয়ে সংগীতজীবন শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে নিউ পোর্ট ফোক উৎসবে অংশগ্রহণের পর তিনি খ্যাতি লাভ করেন। তিনি যুদ্ধ এবং সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে গান গেয়েছেন। জোয়ানের বাবার এক বন্ধু তাকে একটি উকেলেলে গীটার উপহার দেন। তিনি ৪টি কর্ড বাজাতে শেখেন যা দিয়ে তিনি রিদম এবং ব্লুজ বাজাতে পারতেন। তার বাবা মা ভয় পেতেন যে সংগীত তাকে মাদকাসক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। ৮ বছর বয়সে তিনি ফোক গায়ক পিট সিগার এর কনসার্ট দেখে মুগ্ধ হন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি জনসম্মুক্ষে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি তার প্রথম গিবসন অ্যাকুয়াস্টিক গিটার কিনেন।
শুধু তো গান নয়, মানুষটা নিজেই একটা কন্ঠস্বর।যখন কোনও অন্যায়, অবিচার বা অনর্থ ঘটেছে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।সে যুদ্ধ হোক, রাজনৈতিক আন্দোলন হোক বা পশুদের রক্ষা হোক। বব ডিলানের সাথে একসময় গান গেয়েছেন, বলা যায় একে অপরের পরিপূরক ছিলেন, প্রেমে পড়েছেন, কিন্তু প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর একে অপরের কুৎসা রটায়নি।
১৯৭১ সালে মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ নামক বিখ্যাত কনসার্টে "স্টোরি অফ বাংলাদেশ" গানটি পরিবেশন করেন। গানটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ,পাকিস্তানের গণহত্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ত্রহীন ছাত্রদের হত্যার কথা উঠে আসে।
অন্তরের সবটুকু দরদ ঢেলে বাংলাদেশের জন্য গান গেয়েছেন জোয়ান। 'সং অব বাংলাদেশ' শিরোনামের গানটি রচনার প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত। পরে চান্দস মিউজিক থেকে ১৯৭২ সালে "সং অফ বাংলাদেশ" নামে গানটি প্রকাশ করেন।
সেই রাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর রক্তপিপাসু হিংস্র পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংসতায় ক্ষুব্ধ হন, আহত হন জোয়ান। ব্যথিত হৃদয়ে হাতে তুলে নেন গিটার। রচনা করেন অনবদ্য সৃষ্টি ‘দ্য সং অব বাংলাদেশ’। তিনি গানটি লিখেছিলেন ম্যাডিসন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে গাওয়ার জন্য। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত ওই কনসার্টের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিটলস তারকা জর্জ হ্যারিসন। তবে জোয়ান কনসার্টে অংশ নিতে পারেননি। তার কম্পোজ করা গানটি তিনি ১৯৭১ সালের শেষের দিকে একাধিক মঞ্চে গেয়েছেন। পুরো গানটিতে ২২ বার 'বাংলাদেশ' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে গানটিতে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভীনদেশী এই সাহসী যোদ্ধা ২০০৯ সালের ২০মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য ও ছবিঃ উইকিপিডিয়া থেকে সঙ্গগৃহীত ও সংকলিত