কবিতা: বর্ণবাদের জনক - লিখেছেন - রিমন আহমেদ
বর্ণবাদ অর্থ নহে বর্ণ নিয়ে বিবাদ,
বর্ণবাদ হলো বিচার করা মনুষ্যের জাত!!
বর্ণবাদ বুঝতে হলে ইতিহাস খুলতে হবে,
হাজার বছরের ইতিহাসে চক্ষু বোলাতে হবে।
ভারত বর্ষে শুরু হয় আর্য-অনার্য দিয়ে!
মাঝে গেলো কতো ক্ষত্রিয়- ব্রাহ্মন-বৈশ্য-শুদ্র।
হলো কতো যুদ্ধ সুর-অসুর রূদ্র।
হলো কতো রাজা-মহর্ষি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ক্রোধ।
বয়ে গেলো কতো উথাল-পাতাল ঢেউ,
কতো আন্দোলন, কতো সংস্কারণ।
এখনো আছে কিছু কিছু,
বর্নবাদ ছাড়েনি আমাদের পিছু।
এইতো শেষ হলো কিছুদিন আগে,
বর্নবাদ পড়েছিলো শ্রী কৃষ্ণের বাগে!
বর্ণবাদ হলো লন্ড বন্ড,
তারপরেও আছে খন্ড-খন্ড।
আমরা ছড়িতে দেইনি পিছু,
রাখিয়াছি উৎকর্ষ রুপে কিছু-কিছু।
আরবে বর্নবাদ ছিলো গোত্র-বংশীয়।
কতই না হানাহানি,
যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিলো গোত্রে-গোত্রে।
ছিলো যুদ্ধ-বিগ্রহ, চলতো শত-শত বছর,
অতীব নগন্য সূত্রে।
গোত্রের আনুগত্য, গোত্রের ভক্তি, গোত্রের শক্তি।
গোত্রই ছিলো আজীবনের আসক্তি।
গোত্রের দোহাইয়ে করতো তারা,
নানা বিধ্বংসী কর্মকান্ড,
কেটেছিলো কতো অসহায়ের মুন্ড।
এই সময়কে ইতিহাসে বলা হয়,
আইয়ামে জাহেলিয়াত।
এইতো কিছুদিন আগে,
আরব গোত্রের কুফুরী আনুগত্য উৎখাত করলো
আল্লাহর পেয়ারা,
মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সা.
সিন্ধু হতে আন্দালোস হলো ভাই-ভাই,
সেই সুবর্ণ যুগ,
আবার চাই!
বারংবার চাই!!
আজীবন চাই!!
ইউরোপীয় বর্ণবাদের শুরু,
সেই ইয়াহুদী গঠন কাল হতে।
এখনো ইহুদিদের বিশ্বাস,
তারাই সমগ্র মানবজাতির উন্নত জাতি।
তারাই বিশ্ব শাসন প্রতিষ্ঠা করবে রাতারাতি।
যিশু খ্রীষ্ট এসে শুনিয়েছিলেন,
সাম্য- বৈষম্যের বানী।
তারা বলিল, আমরা তোমার কথা নাহি মানি।
খ্রীষ্টের অনুসারীরা ছিলো কিছু ভালো,
ধীরে ধীরে তাদের হৃদয় হয়ে গেলো কালো।
তারই প্রমান,
জার্মান জাতীয়তাবাদের মহাবীর,
এডলফ হিটলার।
সেই আফ্রিকা আর ইউরোপের,
পুরোনো এক বিবাদ, যার নাম এখন বর্ণবাদ।
শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের দাসত্ব করিয়েছে হাজার বছর ধরে,
কুটিল বুদ্ধির জুড়ে, বিশ্ব হয়েছিলো তাদের দাশ।
অনেক দিন পর,
নেলসন মেন্ডেলা দিলো তাদের বাশঁ।
আরো অনেক সংগ্রাম, সংগঠন, সংস্করণ, সংঘাতের পর আজ কিছুটা মুক্তির পথে।
তবু,
সেই অভিশপ্ত,
বর্নবাদের বিষবৃক্ষ রোপিত আজ মম হৃদয়ে।
মম হৃদয়ে আজ,
মনবতার অমৃতরুপে বৈষম্যের বিষ।।
আজও আমি,
বিশ্ব কল্যানের নামে, বিশ্বকে দেই বাঁশ।
কেউ মুখ খুললেই, চড় লাগাই ঠাঁস-ঠাঁস।
টুপি দেখলে ভাবি, জঙ্গি- শিবির- উগ্রবাদী।
সিদুর দেখলে ভাবি, মালাউনের বৌ মালাউনি।
ধুতি দেখলে ভাবি, যোইগ্গা।
পান্জাবী দেখলে ভাবি,পশ্চাৎপদ গামী গাধা।
পাশের গ্রামের মনুষ্যদের ভাবি সবচেয়ে নিম্ন জাতি।
পাশের ধর্মের মনুষ্যকে ভাবি, সবচেয়ে বেএলেম।
পাশের লোকটাকে ভাবি সবচেয়ে গুনাহগার।
এখনো আমি ভাবি,
আমি এসেছি ব্রহ্মার মাথা হতে,
আর তুই আইছত ব্রহ্মার পাও হতে।
এখনো আমি ভাবি,
যিশু শুধু আমাদের ত্রান দিবেন,
আর কাউরে নাহি নিবেন।
আমরাই ঈশ্বরের বাহিনী।
এখনো আমি ভাবি,
আল্লাহ শুধু আমাদের ভালোবাসেন,
আর কারো কাছে নাহি আছেন।
এখনো আমি ভাবি,
বনি ইসরায়েলের জন্যই সকল কিছু সৃষ্টি।
সকল কিছুর উপর থাকবে শুধু আমারই দৃষ্টি।
মনুষ্য লাগিয়াছি মনুষ্যত্বের পিছু,
হাতি তো অনেক দূরের কিছু।
এইগুলো হলো আমার শিক্ষিত আচার।
এই হলো আমার উন্নত মনুষ্যত্ব ।
এই হলো আমার মুমিনত্ব।
এই হলো আমার উন্নত সভ্যতা।
আমি নিজে,
হ্যা, আমি,
শুধুই আমি,
আমি,
আমি নিজেই,
বর্নবাদের জনক!!
আপনি কিন্তু নন,তাইনা??
+লেখক: রিমন আহমেদ
গ্রামের সাদা-মাটা মাটির মানুষ।
নিজের তারিফ করবার মতো বাক্য পাচ্ছি না, কারণ মানুষ মাত্র ই ভুল। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এটাই যে মানুষ সীমা লঙ্ঘন করতে পারে।
ফেসবুক লিংক:আইডি লিংক