মাহমুদ দারবিশের কবিতা: আমি সেখান থেকে এসেছি
আছে অনেকগুলো জানালার একটি ঘর;
আছে ভাই,
বন্ধু
এবং
একটি শীতল খিড়কির কারাকক্ষ।
আমার আছে আপন নিজস্ব ঢেউ,
সমুদ্রচিলেরা যা ছিনিয়ে নিয়েছে
আছে আপন দৃষ্টিভঙ্গি
ও
একটি একান্ত ঘাসের পাতা।
পৃথিবীর শেষ প্রান্তে আছে একটি চাঁদ আমার,
সাথে অসংখ্য মুক্ত পাখি
এবং অমর জলপাই বাগান।
অনেক অতীতে
আমি হেঁটে গেছি সেই জমিনে
এখন যার জীবনকে নিঃস্ব করেছে তরোয়ালেরা।
আমি সেখান থেকে এসেছি।
যখন আকাশ এসে কাঁদে তার মায়ের জন্য
তাকে পাঠাই আমি তার মায়ের কাছে,
কেননা নিজ মায়ের কাছে আমি ফিরতে পারিনা
তাই কাঁদি আর পরিচিত হই ফিরে যাওয়া মেঘের সাথে।
আইন ভাঙার জন্য
রক্তাক্ত আদালতে
বলার যোগ্য সমস্ত শব্দ শিখেছি আমি,
বলবার যোগ্য সমস্ত শব্দ শিখেছি
এবং
ভেঙেছি তাদের
শুধু একটি শব্দ গড়ার জন্য: 'মাতৃভূমি'...
ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশ সারা পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের কাছে সুপরিচিত নাম। ইসরায়েলী দখলদারিত্বের শিকার হয়ে, নিজ মাতৃভূমিতে ছিলেন "অবৈধ অভিবাসী" পরিচয়ে। তার জীবনের গল্প এবং কবিতাগুলো ফিলিস্তিনসহ সারা পৃথিবীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনুপ্রেরণা। ১৯৪২ সালে জন্ম নেয়া এই মহান কবির জীবনাবসান হয় ২০০৮ সালের ৬ই আগস্ট।
কবি এবং কবিতা সম্পর্কে তিনি একবার বলেছিলেন,"আমি ভেবেছিলাম কবিতা সব কিছু পরিবর্তন করতে পারে, ইতিহাস পাল্টে দিতে পারে, আমাদের মানবিক করতে পারে। আর আমি মনে করি এই গভীর মায়ার জন্যই কবিরা কবি হন এবং বিশ্বাস করতে শেখেন। কিন্তু এখন আমি মনে করি, কবিতা শুধুমাত্র কবিকেই পরিবর্তন করতে পারে"
আমি সেখান থেকে এসেছি কবিতার সংক্ষিপ্ত মূলভাব:
মাহমুদ দারবিশের অনেকগুলো জনপ্রিয় কবিতার অন্যতম এই কবিতাটিতে বেদখল হয়ে যাওয়া মাতৃভূমির প্রতি একজন দেশপ্রেমিকের অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে। কবিতাটিতে মা, সমুদ্রের ঢেউ, চাঁদ ইত্যাদি রুপকের মাধ্যমে কবির মাতৃভূমি তথা পরাধীন ফিলিস্তিনকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। স্মৃতিকাতর কবি, কবিতার শেষ অংশে বিপ্লবী প্রতিবাদের মাধ্যমে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে ফিলিস্তিনী সহ সারা পৃথিবীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস এবং প্রেরণা যুগিয়েছেন।
কবিতাটির ভাবানুবাদে, অনুবাদক আশরাফুল আলম প্রান্তকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীতা করেছেন সরকারি বিজ্ঞান কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক জনাব সেঁজুতি জাহান জিনাত। অনুবাদকের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো।