গদ্যকবিতাঃ জাতপাতের প্রেম - লিখেছেন- রেদওয়ানা তাবাসসুম বহ্নি
কৃষ্ণসারথী,
কল্পনায় তোমায় গড় হয়ে প্রণাম করি। খোঁপার ফুলে তোমায় অঞ্জলী দেই। আমি যে অচ্ছুৎ গো! তোমায় যে ছুঁতে মানা।
তোমার অমন সোনার বরণ অঙ্গ! সাহস কই আমার তোমায় স্পর্শ করি!
আমি বরং কল্পনায় তোমার সাথে বাসর সাজাই। একছুটে চলে যাই চিলেকোঠায়! যেখানে তোমায় প্রথম ছুঁয়েছিলেম!
সেদিন রাতে আকাশে চাঁদ ছিলো না। মিটমিটিয়ে তারাও জ্বলছিলো না। অমাবস্যা ঢেকে দিয়েছিলো আমার কৃষ্ণবরণ!
সেদিন প্রথম তোমায় ছুঁয়েছিলেম!
ক্ষ্যাপা তুমি জড়িয়ে ধরলে আমায়!!
ভালোবাসার আলিঙ্গনে বাধা পড়ে গেলাম আমি।
আবার কখনো একছুটে চলে যাই সেই নদীর পাড়ে। সেই যে বার দু'জনে হাতে হাত রেখে গেয়েছিলেম ভালোবাসার গান!
সেবারে দোল পূর্ণিমায় লাল আবীরে ভরিয়ে দিলে আমার সিঁথি!
মনে প্রাণে তোমায় স্বামী হিসেবে মেনে নিলেম। এ যে সাত জন্মের বন্ধন গো!
কখনও বা দিনের ক্লান্তি শেষে রাত নামলে চুপিচুপি আমার ঘুম ভাঙাতে। দু'জনে হাটতে যেতাম বহুদূরের পথ। হঠাৎ নিশুত রাতে আমাকে একা ফেলে উধাও হয়ে যেতে তুমি! আমায় চমকে দিয়ে কি যে সুখ তুমি পেতে!
হাতের মুঠোয় একটি জোনাক পোকা দিয়ে বলতে- "কন্যে ভালোবাসো আমায়?"
আমি তখন লাজে মরি! আমার মত সামান্যার সাধ্যি কই তোমায় ফেরাই!
আমি চোখ বুঁজে আজও ভেবে নেই, তুমি হারিয়ে যাও নি জাত-পাতের আভিজাত্যে।
ঠুনকো অহংকার তোমায় গ্রাস করে নি। ভালোবাসা তোমায় জয় করেছে।
হায় ঈশ্বর!! কি নিদারুণ বোকা আমি! আমি ভুলে যাই আমি নিচু জাত। তোমায় যে আমার ছুঁতে মানা।
ওসব ভালোবাসা, লাল আবীর তোমার নিছক খেলা মাত্র!
বেলা শেষে বালির ঘরের মত ভেঙে যায় আমাদের বাসর, ছিড়ে যায় সাত জন্মের বাঁধন!
তুমি হও উচ্চবংশীয় ব্রাক্ষ্মণ! আর আমি ছোটজাত..।