আমাদের এই ভারত উপমহাদেশ আবিষ্কারের ইতিহাস সবার কমবেশি জানা। পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো ডা গামা স্পেন থেকে যাত্রা করে কিছুটা ভুল করেই আমাদের ভারত উপমহাদেশ খুঁজে বের করেছিলেন। যদিও আমার উদ্দেশ্য এখানে ইতিহাস নিয়ে বিস্তার পারা নয়।

ছোটবেলা থেকেই মনে খুব শক্ত একটা ইচ্ছে ছিল নাবিক হবো, একেবারে ক্যাপ্টেন জ্যাক। সীমাহীন নীল সাগরকে জনমানবহীন জায়গা থেকে দেখতে কেমন লাগে তা দেখার ইচ্ছে, আমার সেই স্বপ্ন দেখার দিন থেকেই। মামা জাহাজের ক্যাপ্টেন। বড় দুই ভাইয়ের একজন চীফ অফিসার, বাকি জন থার্ড অফিসার (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের পদের নাম), তাই সাগরে ভেসে বেড়ানোর ইচ্ছে ছিল।

কিন্তু মা, যে এই দুনিয়ায় আমায় সবথেকে বেশি ভালোবাসে, সে আমাকে দিতে নারাজ। মামা আর ভাইদের দেখে এবং তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনে ওনি অনেকটা ভয় পেয়েছে বলা চলে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে তাই ভাবলাম দেশের বাইরে গিয়ে এরোনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংটা শেষ করে আসব। কিন্তু এর প্রসেসিং করতে টাইম লাগবে অনেক। আর এক্সাম এর পর সবাই যেখানে কোচিং করছে আমি সেখানে পাপী, ঘুরি আর খাই।

হুট করে মামাকে নক দিলাম। মামা আমি কিছু দিনের জন্য জাহাজে করে ঘুরে বেড়াতে চাই।ভাইদের ভয় পাই বলে তাদের বলার সাহস পাইনি।
মামা বললো, বেশ তো চলে আয় সামনের মাসে। আমার শিপ জাপানের ওমারিজাকি হিগোসিহারিমা তে থাকবে তখন। তুই সব ফর্মালিটিজ শেষ করে আগামি ৭ তারিখের টিকিট কিনে নে।আমি আচ্ছা বলে বলে কথা শেষ করে মাকে গেলাম রাজি করাতে।সব বলার পর মা যেনো আকাশ থেকে পড়ল।



যাইহোক, ভাইয়েরা নেটওয়ার্ক এর বাইরে থাকায় মাকে ম্যানেজ করে, সকল কিছু ঠিক ঠাক করতে করতে সেই ৭ তারিখের ফ্লাইটে আমি অবশেষে ৮ তারিখে সকালে জাপানে।
মামা রিছিভ করে বন্দরে নিয়ে গেলো আমায়।


মামার রুমেই আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।বলে রাখি মামার শিপটা হলো একটা ভি শিপ (গাড়ি আনা নেয়া করে)।১১ তারিখ পর্যন্ত আমরা পোর্টেই ছিলাম। ১২ তারিখে আমাদের শিপ যাত্রা করতে বের হয়ে গেলো। মজার বিষয় হলো আমি এই পোর্ট এর নামটা ভালো করে বলতেই পারতাম না। ওমাহিরা বলতাম আমি।মামা তার অফিসারদের সকল কিছু বুঝিয়ে দিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। আমরা উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর ধরে যাবো। যাত্রা পথে হংকং, ফিলিপিন, ইন্দোনেশীয়া বিরতি নেব এবং পাপুয়া নিউগিনির পাশ দিয়ে যাবো।


ছোটবেলায় অনেক বোট জার্নি করেছি কিন্তু বিশাল সাগরের বুকে এই প্রথম আমি, তার উপর আবার মস্ত বড় জাহাজে।
আমার যেমন আনন্দের বন্যা ছিল তেমনি ভাবে আবার বুক ভরা ভয়ও ছিল।
সাগরের সুউচ্চ ঢেউ দেখতে দেখতে চললাম।
জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা যে কি মজার তা বলে বুঝানো যাবে না। বাতাস এসে নিজেকে যেনো নতুন করে চিনিয়ে যায়, দিয়ে যায় জেগে ওঠার শক্তি। জাহাজে মামা ছাড়া আরো দুইজন বাঙালি আছেন, বাকিরা চাইনিজ, একজন নাইজেরীয় ও আছে। দেখলেই আমার ভয় করতো। আমাদের কি টাইপের খাবার লাগবে মামা তা চিফ কুক কে বুঝিয়ে দিতেন। কারণ আমি আজে বাজে খাবার খেতে পারি না।
চাইনিজরা তো যাতা খেতে পারতো।
কিন্তু আমরা মুসলীম। হালাল কাম্য।
তাই খাবারের জন্য আমাদের ভরসা চাইনিজ রাধুনি চিয়াংছুই। যাইহোক জাহাজ শিকোকু পেড়িয়ে এতক্ষনে প্রশান্ত সাগরের বুক বেয়ে চলছে। রাতের খাবার শেষ করলাম সামুদ্রিক মাছের নুডুলস দিয়ে। আমার একটা বাজে অভ্যাস ছিল। সিগারেট খাবার পর লাগবেই আমার। কিন্তু জাহাজের মালিক যে আমার মামা। ওনি ক্যাপ্টেন তাই তিনিই সব এখানকার। মামা এখন রেস্ট নেবে। আমি এই সুযোগে ডেকে গিয়ে বাতাস খাওয়ার কথা বলে মামার থেকে বিদায় হলাম।
ডেক এ গিয়ে ডেক অফিসার চাইনিজ (নাম টা উচ্চারণ করে কষ্ট নাইবা করলাম) এর সাথে একটু কথা বলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পুষালো না।
ওরা সব পারলেও ইংরেজি টা জানেই না হয়তো।
ইশারা ইংগিতে একটু ভাব করে সিগারেট এর কথা বুঝালাম তাকে। সে বললো-"অহ, ইয়েছ ম্যান।"
কোন ব্র্যান্ড এর সিগারেট ছিল আমি জানি না কিন্তু আমাদের গোল্ডলিফ এর মতই লেগেছিল।
---------চলবে





লেখকঃনবাব শাকিকুল্লাহ
ফার্মগেট,ঢাকা