১.

শ্রাবণের এক বৃষ্টিমুখর সকাল। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মাঝে বারান্দায় মুখোমুখি বসে চা হাতে গল্প করছে এক পিতা ও কন্যা। কন্যার ইচ্ছে শান্তিনিকেতনে পড়বার, অনেকদিন বলবে বলবে করেও সাহস করে উঠতে পারছে না বাবাকে বলবার। অবশেষে মায়ের সাহসে দুরুদুরু বুকে সেদিন বাবাকে বলেই ফেললো। শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে চায়ের চুমুক দেন পিতা। স্মিত হেসে বলেন শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করা তো খুব সৌভাগ্যের ব্যাপার। আশাবাদী হয়ে উঠে কন্যার মন।

কিন্তু হঠাৎ করেই গলাটা কঠিন হয়ে যায় বাবার। 'কিন্তু মা, দুঃখের বিষয় হলো, আমি তো তোমাকে শান্তিনিকেতনে পাঠাতে পারবো না। দেশের অবস্থা এখন ভালো না, রাজনীতির অবস্থা আরো বেশি খারাপ। এই সময় আমার মেয়ে ভারতে পড়তে যাবে, এটা তো মা ঠিক হবে না।'
বাবার মন্তব্য শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় মেয়ে। খানিকপর অস্ফুট স্বরে 'ঠিক আছে, আব্বু' বলে উঠে চলে যায়। মেয়ের চেয়েও বেশি মন খারাপ হয় বাবার। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবেন নাহ এতোটা রুক্ষভাবে না বললেও পারতাম। কিন্তু কি করার, তিনি যে এমনই। যতদিন বেঁচে ছিলেন পরিবার-সন্তান সবার আগে ভেবেছেন এই ব-দ্বীপের মানুষের কথা, প্রাধান্য দিয়েছেন তাদের উন্নতিকে।

২.

আরেকটু পেছনে চলে যাই। সময় ২৫ মার্চ, ১৯৭১। পাকিস্তানিদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে টালমাটাল পুরো ঢাকা। স্ত্রী-ছোট দুই সন্তানকে বাসায় রেখে আগেই ঘর ছাড়তে হয়েছে তাকে। বাসায় আর্মিরা আসলেও বাড়ির ভাড়াটিয়া সেজে কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। আশ্রয়ের জন্য ছুটে যান একই রোডের এক লোকের বাসায়। কিন্তু লোকটি বোধহয় পছন্দ করলেন না তার থাকা, অন্য এক বাড়িতে রেখে আসার নাম করে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসলেন। মাঝরাস্তায় এসে চাবি আনার নাম করে সেই যে গেলেন, আর ফিরে আসলেন না। তার বাড়িতে গিয়ে কড়া নাড়লেন, বেল বাজালেন কিন্তু কেউ আর দরজা খুললো না। মহিলাটি সারারাত কারফিউয়ের মাঝে বাচ্চাদের নিয়ে রাত কাটালেন খোলা রাস্তায়, সারি করে রাখা ইটের পেছনে।



পরের নয়মাসে দেশ স্বাধীন হলো। মহিলার স্বামী তখন অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত। ঘটনাক্রমে সেই লোকের প্রমোশনের ফাইল আসলো তার কাছেই। তিনি নির্দ্বিধায় প্রমোশন কেসটা পাশ করিয়ে দিলেন। বললেন ব্যক্তিজীবনের কোনো কারণে চাকরিক্ষেত্রে উনি বঞ্চিত হবেন, এইটা ঠিক না।

ব্যক্তিগত ক্রোধ, ঈর্ষা অথবা প্রতিশোধ নেবার ইচ্ছা, এগুলোকে উপেক্ষা করে থাকার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের থাকে না। এমন নৈর্ব্যত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকে অত্যন্ত বিরলপ্রজ কিছু মানুষের, চশমা পড়া এই মানুষটিও ছিলেন তাদের দলে।
এই ক্ষণজন্ম মানুষটি ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।



৩.

শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ছোট গ্রাম দরদরিয়া। সেই গ্রামের ছেলেদের নিস্তরঙ্গ জীবনে অচেনা বাতাসের মতো হঠাৎ আগমণ ঘটে তিন ব্যক্তির; রাজেন্দ্র নারায়ণ, বীরেশ্বর ব্যানার্জি এবং মণীন্দ্র শ্রীমণী। তারা রাজবন্দী হিসেবে এসেছেন সেই গ্রামে। সকালে হাজিরা দিয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রামের মেঠো পথে, বই পড়তে দেন গ্রামের বাচ্চাদের।

বাচ্চাদের মাঝে একজন দরদরিয়া গ্রামের মৌলবি মোহাম্মদ ইয়াসিন খান এবং মেহেরুন্নেসা খানমের পুত্র তাজউদ্দীন আহমদ। রাজবন্দিদের কথা অবাক হয়ে শুনে সে। দেশ নিয়ে চিন্তা করার নেশা তখন থেকেই যেন তার মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিলেন তারা। মগজের ধূসর কোষে আলোড়ন উঠে তাজউদ্দীনের, ভাবিয়ে তোলে দেশের মানু্ষের উন্নতি কথা।একসময় বদলি হয়ে যায় এই তিন রাজবন্দির, তাদের সাথে আর কখনো দেখা হয়নি তার। কিন্তু দেশচিন্তা এবং দেশপ্রেমের ভিত্তিটা তখনই গাঁথা হয়ে যায় তার মনের মাঝে।



৪.

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চে, পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর চোখ এড়িয়ে, দুর্গম যাত্রার সঙ্গী ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামের সঙ্গে ঢাকা ত্যাগ করার সময় রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া এক চিরকুটে তিনি তাঁর স্ত্রী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন লিলিকে লিখেছিলেন–
“লিলি, আমি চলে গেলাম। যাবার সময় কিছুই বলে আসতে পারিনি। মাফ করে দিও। আবার কবে দেখা হবে জানি না…… মুক্তির পর।তুমি ছেলেমেয়ে নিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষের সাথে মিশে যেও।
— দোলনচাঁপা।”

দেশকে বাঁচাতে শুরু হয় তার এক অনিশ্চিত অভিযান। অস্থায়ী সরকার গঠন করার পর ব্যারিস্টার আমির উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে যাবার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ভারতের সীমান্তে পৌঁছালেন অথচ ভারতে ঢুকেননি। একজন বলে উঠলো “আপনি যাবেন না?” তিনি দৃঢ় গলায় বললেন, "আমার দেশ স্বাধীন। আর স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমি বিনা প্রটোকল আর তাঁদের আমন্ত্রণ ছাড়া আমি তাঁদের দেশে যেতে পারিনা। এটি আমার দেশের জন্য প্রচণ্ড অসম্মানজনক। আমাকে তো ভারত আমন্ত্রণ জানায়নি।"
পরবর্তীতে ভারত সরকার তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে ভারতে নেয়। এমনই ছিলো তাঁর আত্নসম্মানবোধ।

ভারতে ৩ এপ্রিল সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে। ইন্দিরা গান্ধী যুদ্ধে সরাসরি সাহায্য করতে চাইলে তিনি বলেন, "এটা আমাদের যুদ্ধ। আমরা চাই ভারত এতে জড়াবে না। আমরা চাই না ভারত তার সৈন্য দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে আমাদের স্বাধীন করে দিক। এই স্বাধীনতার লড়াই আমাদের নিজেদের এবং আমরা এটা নিজেরাই করতে চাই।”

তিনি কেবল যুদ্ধশিবির পরিচালনা, অস্ত্র সহায়তা এবং শরণার্থীদের ব্যাপারেই সহযোগিতা চেয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকালে তিনি প্রায়ই বিভিন্ন ক্যাম্পে ও রণক্ষেত্রে, দুর্গম অঞ্চলে চলে যেতেন মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণকে অনুপ্রেরণা দিতে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বসে একসাথে খাবার খেতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়ে উজ্জীবিত রাখতেন। এক ক্যাম্পে গিয়ে বলেছিলেন, "মুছে যাক আমার নাম, তবু থাকুক বাংলাদেশ।"

মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতার থিয়েটার রোডে একটি দুই তলা বাড়ি ভাড়া নেয়া হলো মুজিব নগর সরকারের পক্ষ থেকে। বাড়িটির দু তলার এক দিকের ছোট একটি স্যাঁতস্যাঁতে কামরায় থাকতেন তাজউদ্দিন আহমদ, অন্যটি তিনি ছেড়ে দিলেন অফিসের কাজের জন্য। সেই স্যাঁতসেতে ঘরে যুদ্ধের নয় মাস কাজ করে গেছেন একমনে। একই শহরে পরিবার থাকা সত্ত্বেও একবারের জন্যেও তাদের সাথে দেখা করতে যাননি। যুদ্ধকালে তাঁর সম্বল ছিল একটিমাত্র শার্ট, সারাদিন সেটা পরে রাতে ধুয়ে দিতেন। সকালে আবার সেই শার্টটাই পড়তেন।

সবসময় চাইতেন পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করে যেতে। সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে নয় মাসের যুদ্ধ শেষে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। এই সুবিশাল অর্জনে তিনি কোনো কৃতিত্ব দাবি করেননি। তিনি বলেছিলেন–
“আমি তো শুধু ধাত্রীর কর্তব্য পালন করেছি মাত্র।”



৫.

১৯৭২ সাল, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারার সাথে মিটিং এ বসেছেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। প্রাথমিক আলোচনার পর বিস্তারিত আলোচনার জন্য ম্যাকনামারা, তাজউদ্দীন আহমদ এবং সিরাজুদ্দিন যখন বসলেন, তখন ম্যাকনামারা জানতে চাইলেন বাংলাদেশের জন্য কোথায় কী ধরনের সাহায্য দরকার।

তাজউদ্দীন আহমদ বললেন, 'আমাদের যা দরকার তা আপনি দিতে পারবেন কি-না আমার সন্দেহ আছে। ম্যাকনামারা বললেন, 'মিস্টার মিনিস্টার, আপনি বলুন, আমরা চেষ্টা করব দিতে।' তখন তাজউদ্দীন আহমদ বললেন, 'মিস্টার ম্যাকনামারা, আমার গরু এবং দড়ি দরকার। যুদ্ধের সময় গরু সব হারিয়ে গেছে। এখানে-ওখানে চলে গেছে, মরে গেছে। পাকিস্তান যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, চাষিরা এদিক-সেদিক পালিয়ে গেছে, তখন গরু হারিয়ে গেছে।

এখন যুদ্ধ শেষ, চাষি ফিরেছে কিন্তু গরু নাই, তাই চাষ করবে কীভাবে? কাজেই আমাদের অগ্রাধিকার চাহিদা হলো গরু। ম্যাকনামারার চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। তাজউদ্দীন আহমদ বললেন, 'আর আমাদের সমস্ত দড়ি তো পাকিস্তানিরা নষ্ট করে ফেলেছে, এখন গরু পেলে গরু বাঁধতে দড়ি প্রয়োজন। গরু এবং দড়ি প্রয়োজন খুব তাড়াতাড়ি, না হলে সামনে জমিতে চাষ হবে না।'

অস্বস্তিকর এই মিটিং শেষে যখন তাজউদ্দীন আহমদ কে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কেন এরকম করলেন। উনি বললেন, 'এই লোকটি তো আমেরিকার ডিফেন্স সেক্রেটারি ছিলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে আমেরিকা। আমাদেরকে স্যাবোটাজ করেছে। শেষ পর্যন্ত সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছে আমাদেরকে ধ্বংস করে দিতে। আর তার কাছে সাহায্য চাইবো আমি?'

বাংলাদেশের আঁতে ঘা লাগে এমন সব ব্যাপারে তিনি ছিলেন নির্মম, নিষ্ঠুর।



৬.

স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে এগিয়ে নিতে প্রণয়ন করেন পাঁচশালা পরিকল্পনা। লিবিয়া থেকে সৌদি আরব, ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্র সবখানে ছুটে যান সাহায্যের আশায়।
একবার ঢাকা শহরে দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গেলে তিনি সাইকেল কেনেন। সাইকেল নিয়ে একা একা ঘুরে বেড়াতেন ঢাকা শহরের কাঁচাবাজারগুলোতে। মিশে যেতেন সাধারণ মানুষের মাঝে, জানতে চেষ্টা করেছেন তাদের দুর্ভোগ কোথায়, কিভাবে কমানো যায় দুর্ভোগ।

এইভাবেই ফাইলের দিন আর রাজনীতির মোড়কে বাংলাদেশ নিয়ে কথোপকথনে দিন কাটতে থাকে তাজউদ্দীনের। কিন্তু সে সময় বড় রাক্ষুসে। গ্রিক পুরাণের হাইড্রার মতো একদিকের নৈরাজ্য বধ করতে না করতেই অন্য প্রান্তে মাথা তোলে আরো দুর্নীতি, আরো দুর্বিনীতরা। গ্রেট ম্যানরা হাঁটি হাঁটি পা পা পদক্ষেপে পেছাতে থাকেন খাদের কিনার অভিমুখে।



৭.

মনীষীরা বলেন, ইতিহাসে কোনো ফাঁক রাখতে নেই। ফাঁক থাকলেই তাতে ঢুকে পড়ে জঞ্জাল। যার যেখানে স্থান নেই, সে সেখানে তখন স্থান দখল করে বসে। স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ, দ্বিধা-বিভক্তকারী ও সুযোগসন্ধানীরা তখুনি ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাতে সচেষ্ট হয়।



নিন্দুকেরা তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে বানানো কথা বলে কানভারি করে শেখ মুজিবের। গুজব উঠে ক্ষমতার লোভে তিনি নাকি চাননি পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে আসুক শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি নাকি চেয়েছিলেন চিরদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী থেকে যেতে!

লোকমুখে এসব শুনে চুপ করে থাকেন তাজউদ্দিন আহমদ। অসম্ভব বেদনাক্রান্ত মন নিয়ে বসে থাকেন, অপেক্ষা করেন হয়তো মুজিব ভাই তাকে ডাকবেন। পাশে বসিয়ে শুনবেন যুদ্ধের দিনগুলোতে কি হয়েছিল, কারা ছিল বন্ধু, কারো ভারী করেছিল শত্রুপক্ষ। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান এত ব্যস্ত, সেই সময় তার হয়ে উঠে না।

৮.

ডুবতে থাকা মানুষ নাকি খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়- সমাজতন্ত্র আর পুঁজিবাদের দাবা খেলার সেই লড়াই পাশ কাটিয়ে চলা শেখ মুজিবও তার আশেপাশের মানুষের প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হন। সারাজীবন গণতন্ত্রের জয়গান গাওয়া শেখ মুজিব চালু করেন চান সমাজতন্ত্র। দীর্ঘদিনের পরিক্রমায় সমাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে সোভিয়েতে, চীনে। কিন্তু ঘোষণা দিয়ে কি কখনো সমাজতন্ত্র চালু করা যায়? এই কৃত্রিম পথ কি আদৌ টেকসই হবে?

একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মত দেন অনেকেই। তাজউদ্দীন আহমদও আশাবাদী ছিলেন না ঐক্যজোট নিয়ে। শেখ মুজিবকে তিনি বারবার বুঝাতে চেয়েছেন। গলায় আকুতি ঢেলে বলেছিলেন, "বাই টেকিং দিস স্টেপ, ইউ আর ক্লোজিং অল দ্য ডোরস টু রিমুভ ইউ পিসফুলি ফ্রম ইউর পজিশন! আর সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা কি ঘটবে, জানেন মুজিব ভাই?....বন্দুকের গুলিতে শুধু আপনি মারা যাবেন না, আমরাও মরবো। আর দেশের ভয়ানক কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে!"

তাজউদ্দিন নিজেও যদি সে মুহূর্তে জানতেন, কী অমোঘ রক্তঝরার আভাস দৈব বলিয়ে দিয়েছে তার মুখ দিয়ে!

৯.

বাংলাদেশের স্বল্প সময়ের ইতিহাসে বহু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেছে ইতোমধ্যেই, কিন্তু এরচেয়ে বেদনাদায়ক কিছু ঘটেছে, সেটা স্মরণ করতে পারে না অনেকেই। তাজউদ্দীন, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পার্টির দলাদলির কাদা থেকে সযতনে আড়াল করে গেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের সিংহাসনটিকে মুজিব ভাই ফিরে এসে সে আসনে বসবেন বলে, এক হাতে কাপড় ধুয়ে অন্য হাতে ফাইল লিখে যিনি সমস্ত অপপ্রচারের ধুলো নিন্দার কাদা মেখে সরকার চালিয়ে গেলেন শেখ মুজিবের নামে; সেই তাজউদ্দীনের বাড়ির ছাদে আর উড়বে না বাংলাদেশের পতাকা! আর এত রাতারাতি, এত নাটকীয় হবে সেই তাজউদ্দীনের অপসারণ!

২৬ শে অক্টোবর, ১৯৭৪। ঘড়ির কাঁটায় বারোটা বেজে বাইশ মিনিট, অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তাজউদ্দীন আহমদ!
পৃথিবীর মানচিত্রে যতদিন অস্তিত্ব থাকবে বাংলাদেশের, তাজউদ্দীন আহমদ থাকবেন ততোদিন। তাকে পাশে সরিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে লিখতে পারবে না কেউই।


তথ্যসূত্র:
১. সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ : সুহান রিজওয়ান
২. তাজউদ্দীন আহমেদের চিঠি : সিমিন হোসেন রিমি
৩. জেল হত্যাকান্ড : আবু সায়্যিদ
৪. তাজউদ্দিন নিঃসঙ্গ এক মুক্তিনায়ক : ইমতিয়ার শামিম

লেখক: আতিক মোর্শেদ
পড়ালেখা করছি সরকারি বিজ্ঞান কলেজে। জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছেন খেলাধুলার মাঝে। স্বপ্ন দেখেন ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার ট্যাকটিক্যাল অ্যানালিস্ট হওয়ার।