চৈতী হাওয়া (পর্ব ৩) - লিখেছেন - আবীর হাসাম সায়েম
বাড়িতে মেহমান এসে পরেছে। রাবেয়া খাতুন সবাইকে সাদরে গ্রহন করছেন। সবাইকে শরবত খেতে দিচ্ছেন। যেকোন সময় বর পক্ষ এসে পরবে। রাবেয়া খাতুনের বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নবনী এখনো তৈরী হয় নি। তিশা আর তার বান্ধুবী ওকে সাজাচ্ছে। রাবেয়া খাতুন বলেছিলো পার্লারে চলে যেতে। কিন্তু তিশা বাধ সাধল। সে নিজের বোনকে নিজেই সাজাবে।
"আপু তো এমনিতেই যেই সুন্দরী। এরপর আবার মেকআপ লাগে নাকি?"
এইদিকে মেয়ে এখনো তৈরী হয় নি, অন্যদিকে লতিফ সাহেবের ঘরে আসর বসেছে। বেশিরভাগ মেহমানই ওই আসরে বসে আছে।রাবেয়া খাতুন জানেন, ওই আসরে শুধু একজনই বক্তা। আর আসরের জিরাগুঁড়া হলো লতিফ সাহেব। গত সপ্তাহে তিনি রাফার লেখা কবিতার বই ছাপিয়েছেন। ১সপ্তাহেই ১০৩ খানা বিক্রি হয়েছে। যার মধ্যে ৭০ টা কিনেছেন লতিফ সাহেব
নিজেই। রাবেয়া খাতুন মনে মনে লতিফ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
" গ্রেডুয়েটেড স্টুপিড।"
রাবেয়া খাতুন সোফায় বসলেন। তিনি বেশ ক্লান্ত। রাফা ছেলেটাকে রাবেয়া খাতুন আগে বেশ পছন্দ করতেন। এখনো হয়তো করেন কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তিনি রাফাকে সহ্য করতে পারছেন না। আগে বাড়িতে ভালো কিছু রান্না হলেই রাবেয়া খাতুন নিজে রাফাকে ফোন দিতেন। একবার রাফার প্রচন্ড জ্বর এলো, পরীক্ষা করে দেখা গেলো টাইফয়েড। রাবেয়া খাতুন তখন প্রতি ১ ঘন্টা পরপর ফোন দিয়ে খবর নিয়েছেন। রাফা সুস্থ হবার পর ১০০ ফকিরকে নিজে রেধে খাইয়েছিলেন।
তারা যখন বদলি হয়ে ঢাকায় আসে তখন তার মেয়েকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। তার মেয়ে কারো সাথে মিশতে পারত না। তখন তার একমাত্র বন্ধু ছিলো রাফা- যার নিজেরও কোনো বন্ধু ছিলো না। আজ প্রায় ১৫ বছর কেটে গেলো। রাফা সময়ের সাথে বদলেছে, সে বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছে-চলেছে। সবার সাথে কথা বলতে পারছে। কিন্তু নবনীর গন্ডি এখনো রাফা পর্যন্তই। কিছু হলেই সে রাফাকে ফোন দিবে, রাফাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। এতে রাবেয়া খাতুন কিংবা লতিফ সাহেবের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আশে পাশের মানুষ 'ফ' থেকে 'ফানুস' বানাতে মোটেও দেরি করে নি। যারাই নবনীকে দেখতে আসত, তাদের কানে কে যেনো এইসব আজেবাজে জিনিস বলত,আর বিয়ে ভেঙে যেতো।
এইসব ভাবতে ভাবতে রাবেয়া খাতুনের চোখে পানি এসে পরে।